ত্রিপুরা উপজাতি

ত্রিপুরা উপজাতি (Tripura Tribe) সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাচ্ছি —


🏞️ পরিচিতি

ত্রিপুরা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি। তারা মূলত ইন্দো-মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ত্রিপুরারা মূলত চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলা, বিশেষ করে খাগড়াছড়িরাঙামাটি অঞ্চলে বসবাস করে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সমতল ভূমিতেও তাদের বসতি আছে, যেমন হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, এবং নেত্রকোণা জেলায়।


👥 জনগোষ্ঠী ও ভাষা

  • ত্রিপুরারা নিজেদের "Tipra" বা "Tiprasa" বলে পরিচয় দেয়।
  • তাদের ভাষার নাম কোকবরক (Kokborok), যা তিব্বতি-বর্মী ভাষা পরিবারভুক্ত
  • অনেক ত্রিপুরা বর্তমানে বাংলা ভাষাতেও সাবলীল

🧬 উৎপত্তি ও ইতিহাস

  • ধারণা করা হয়, ত্রিপুরাদের মূল আবাস ছিল তিব্বত ও মিয়ানমার অঞ্চল
  • পরে তারা ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে নেমে এসে বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় বসতি স্থাপন করে।
  • ঐতিহাসিকভাবে তারা ত্রিপুরা রাজ্যের শাসক জাতি ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজারা "মানিক্য রাজবংশ" নামে পরিচিত।

🏠 জীবনযাত্রা

  • ত্রিপুরাদের গ্রাম সাধারণত পাহাড়ের ঢালে গড়ে তোলা হয়।
  • ঘরগুলো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি, মাটির উপরে খুঁটির ওপর স্থাপিত।
  • তারা ঝুম চাষে দক্ষ। এছাড়া ধান, আদা, হলুদ, মরিচ, কফি, ও বিভিন্ন ফলমূল চাষ করে।
  • বর্তমানে অনেকেই সমতলে স্থায়ী কৃষি ও চাকরিতে যুক্ত।

🎎 পোশাক ও অলংকার

  • নারীরা পরে রিনাই (রঙিন কাপড়)রিসা (বুক ঢাকার কাপড়)
  • পুরুষরা পরে ধুতিকামিজ বা জামা
  • ত্রিপুরা নারীরা অলংকার ও রঙিন পোশাক ভালোবাসে, যেমন: হার, বালা, কানের দুল, নূপুর ইত্যাদি।

🍛 খাদ্যাভ্যাস

  • প্রধান খাদ্য হলো ভাত, সঙ্গে সবজি, মাছ, শুকনো মাছ, বাঁশকোর, এবং মাংস
  • তারা চোলাই মদ তৈরি ও পান করে, যা সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে ব্যবহৃত হয়।

🕉️ ধর্ম ও বিশ্বাস

  • প্রাচীনকালে ত্রিপুরারা আনিমিজম (প্রকৃতি পূজা) করত।
  • বর্তমানে অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তবে কিছু খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।
  • তারা দুর্গাপূজা, বৈসু (নববর্ষ উৎসব), গঙ্গাপূজা, হাওজাগা পূজা ইত্যাদি পালন করে।

🎉 উৎসব ও সংস্কৃতি

  • সবচেয়ে বড় উৎসব হলো বৈসু (চৈত্র মাসের শেষে পালন করা নববর্ষ উৎসব)।
  • তারা নাচ, গান, ঢোল, বাঁশি, ও করতাল বাজিয়ে আনন্দ করে।
  • ত্রিপুরা নৃত্য (Tripura Dance) খুবই বিখ্যাত — বিশেষ করে মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী দলীয় নাচ।

🏫 শিক্ষা ও পেশা

  • একসময় তাদের শিক্ষার হার ছিল কম, তবে বর্তমানে অনেক ত্রিপুরা ছেলে-মেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
  • এখন তারা শিক্ষকতা, সরকারি চাকরি, সেনাবাহিনী, ও ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে।

📊 জনসংখ্যা

বাংলাদেশের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১,২০,০০০ জন
(বর্তমানে এই সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।)


📜 সারসংক্ষেপ

বিষয় তথ্য
গোষ্ঠীর নাম ত্রিপুরা (Tripura / Tipra)
ভাষা কোকবরক
ধর্ম হিন্দু, খ্রিষ্টান
প্রধান জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান
প্রধান পেশা কৃষি, ঝুম চাষ, চাকরি
প্রধান উৎসব বৈসু
জাতিগত পরিচয় ইন্দো-মঙ্গোলয়েড

Comments

Popular posts from this blog

চাকমা ভাষা ও লিপি

চাকমা জনগোষ্ঠীর ধর্ম, উৎসব ও সংস্কৃতি

বাংলাদেশে উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী